বাংলাদেশের একটি খুবই সাধারণ গ্রাম, যার বুক চিরে চলে গেছে ছোট্ট একটি নদী। গ্রামটির প্রতিটি ধুলিকনা আর গাছপালার সাথে সখ্যতা ছিল ফিরোজের। ছোট বেলা থেকে এক সাথে খেলতে খেলতে কখন যে ওরা একে অপরকে ভালবেসে ফেলেছিল তা কেউ টের পায়নি। গ্রামের বড়লোকের মেয়ে একটি গরীব খেটে খাওয়া চাষার ছেলের ভালবাসার পাত্রি হবে তা কি হয় কখনও? তারপরও স্বপ্নার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওরা যখন প্রকৃতির নিয়মে বড় হল তখনই বাধাটি এলো। ফিরোজ একটি হা-ভাতে ঘরের ছেলে হয়ে কি যোগ্যতায় স্বপ্নাকে পেতে পারে? শুধু বুকভরা ভালবাসা দিয়েই কি জীবন চলে? পাশের গ্রামের মাদ্রাসা থেকে কাস ফাইভ পাশ করার পর আর টিকতে পারেনি সেখানে। ২ মাইল দুরের একটি হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে অনেক প্রতিকুলতার মাঝে এস.এস.সি পাশ করে ফিরোজ। বড় তিন বোনকে বিয়ে দেয়া এবং সংসার নামক তরীটিকে টেনে কুলে ভেড়াতে বাবা হিমসিম খাচ্ছিল। তাই বাবাকে সাহায্য করতে কাজে লেগে যাওয়ায় কলেজের মুখ দেখতে পারেনি ফিরোজ। কিন্তু স্বপ্নাকে পেতে হলেতো কিছু না কিছু যোগ্যতা লাগবেই।
হয় অগাধ টাকা পয়সা না হয় শিক্ষা। কিন্তু ওর কাছেতো কোনটাই নেই। সারা দিন বাবার সাথে মাঠে কাজ করে রাতে নদীর ঘাটে বসে পানির দিকে তাকিয়ে শুধু ভাবে কি করবে সে। স্বপ্না আশ্বাস দিলেও ফিরোজ বুঝতে পারে ওর ঐ আশ্বাস ফানুসের মত চুপসে যাবে ওর বাবার প্রশ্নের কাছে। কোন কুল কিনারা পায়না ফিরোজ। মা বলেছে একমনে আল্লার কাছে কিছু চাইলে নাকি তিনি তার বান্দাকে নিরাশ করেন না। ফিরোজের অবচেতন মন চলে যায় নীল আকাশ ছেড়ে আরও দুরে যেখানে ঐ মহা শক্তিধর থাকেন সেখানে। বিধাতা মানুষের মনের কথা বুঝতে পারেন। একদিন ঢাকা থেকে ফিরোজদের বাড়ীতে বেড়াতে আসেন মায়ের দুর সম্পর্কের এক ভাই। খুব ছোট বেলায় ফিরোজকে তিনি দেখেছিলেন। মা ফিরোজের কথা বলে কাঁদলেন। মামা চাকুরী করতেন ম্যানপাওয়ার রপ্তানী অফিসে। মাকে বললেন ১ লক্ষ টাকার যোগার করে দিতে পারলে তিনি ফিরোজকে বিদেশ পাঠাতে পারবেন। কিন্তু যাদের নুন আনতে পানতা ফুরোয় তাদের কাছে ১ লক্ষ টাকাতো পাহাড়ের সমান। বড় তিনটি বোনকে বিয়ে দিতে দরকার প্রচুর টাকা। ফিরেজের সামনে আশার প্রদীপটিও দপ করে নিভে গেল। অবশেষে বাবার শেষ সম্বল ধানি জমিটি বিক্রিকরে ১ লক্ষ টাকা যোগার করে ঢাকায় মামার বাসায় চলে এলো ফিরোজ। তিন মাস মামার বাসায় থেকে ড্রাইভিং এবং আরবি কথাবলা শিখে রওনা হলো মধ্যপ্রাচ্যের দিকে।ড্রাইভিং শিখলেও লেবার হিসাবে চাকুরী পেল ফিরোজ। অমানুষিক খাটনি খেটেও ওর মুখে লেগে থাকতো বিজয়ের হাসি। ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর ফিরোজের একটিই লক্ষ টাকা রোজগার করতে হবে। বিধাতা মানুষের কোন সাধই অপুর্ণ রাখেন না। তাই একদিন কাকতলিয়ভাবে পরিচয় ঘটে প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাথে। তিনি ওকে দেখে পছন্দ করেন এবং গাড়ী চালাতে পারে জেনে নিজের বাড়ীতে নিয়ে যান। মাদ্রাসায় পড়া ফিরোজের আরবি কথা বলা অনেকটা সহায়তা করে সকলকে আপন করতে। মালিকের তিন নম্বর স্ত্রীর ঘরে ৩টি মেয়ে ও ২টি ছেলে। ছেলে দুটি বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করে। মেয়ে তিনটির লেখাপড়া তখনও শেষ হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি ফিরোজ মালিকের বাসার সকলের খুব আপন মানুষ হয়ে উঠল। মেয়েদের নিয়ে কলেজ, স্কুল ও মার্কেটে যাওয়াই ওর কাজ। গায়ের রংটি বাদ দিলে ওকে বম্বের নায়ক গোবিন্দের সাথে বদল কারা যায় বলে অনেকের ধারণা। মায়াবি এই চেহারা আর শান্ত স্বভাব ওকে সকলের খুব কাছাকছি নিয়ে যায়। মালিকের আলিশান বাসার সাথেই কোয়াটারে ওকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুন্দর একটি ঘর। ফিরোজ ঐ ঘরটিকেই স্বর্গ মনে করে গুছিয়ে রাখে। আধুনিক সব রকম সুযোগ সুবিধাই আছে ঐ ঘরটিতে। ফিরোজের খুব ভাল সময় কাটছিল। মেয়েরা ওকে ভীষণ রকম পছন্দ করতো। মার্কেটে গেলে ওকে কিছুনা কিছু উপহার কিনে দিত আর খাওয়াত। এরই মধ্যে ফিরোজ বেশ কিছু টাকা পাঠিয়েছে বাড়ীতে।
সুখ মনে হয় মানুষের জীবনে বেশীণ স্থায়ী হয় না। তাই ফিরোজের জীবনে নেমে এলো এক মহা দুর্যোগ। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে শাওয়ার ছেড়ে গোসল করছিল ফিরোজ। সাধারণত কেউ ওর ঘরে আসেনা বিধায় বাথরুমের দরজা না লাগিয়েই গোসল করছিল। হঠাৎ দরজা ঢেলে ভিতরে ঢুকলো মালিকে বড় মেয়ে রুবাইয়া। ভুত দেখার মত চমকে উঠে ফিরোজ। মেয়েটি ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। পাথরের মুর্তির মত দাড়িয়ে থাকে ফিরোজ। থর থর করে কাপতে থাকে ওর শরীর। মেয়েটি কোন ভনিতা না করে ওকে জড়িয়ে ধরে। ফিরোজের চোখের সামনে ভেসে উঠে জল্লাদ ওর শীর দিখন্ডিত করছে। ও চিৎকার করে আল্লাকে ডাকছে কিন্তু কোন শব্দ বের হচ্ছে না মুখ থেকে। পাগলের মত মেয়েটি ওর শরীর নিয়ে কিছুক্ষন খেলা করে একসময় নিস্তেজ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। যাবার সময় শুধু বলে- তোর কোন ক্ষতি হবে না। শাওয়ার ছেড়ে বার বার করে ধুয়ে ফেললো শরীরটাকে। কিন্তু পাপটাকে কি করে পরিস্কার করবে ফিরোজ। ফিরোজের মনে মধ্যে বপন হলো আতংকের বীজ। ও জানে এদেশে মেয়েরা যা বলবে সেটাই সত্য। তাছাড়া মালিক খুবই ধন্যাট্ট ব্যক্তি। তার ধন যেমন আছে ক্ষমতাও তেমনি। আতংক নিয়ে সময় কাটতে থাকে ফিরোজের। কোন কাজে কেউ ডেকে পাঠালেই ফিরোজ আৎকে উঠে। মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বিষয়টি লক্ষ করে রুবাইয়া ওকে সাহস দিয়ে বলে - তোর কিচ্ছু হবে না। আমি তোর কোন ক্ষতি করবো না। তুই নিশ্চিন্তে থাক। এভাবে প্রায় ৩টি মাস অতিবাহিত হলো। রুবাইয়া ২/১ দিন পর পরই সুযোগ বুঝে ওর ঘরে আসে। ফিরোজ ছোট বেলায় মায়ের কাছে পরীর গল্প শুনেছে। এখন যদি ঐ কল্পনার পরীর সাথে তুলনা করা যায় তবে তা কম মনে হবে। রুবাইয়ার আশ্বাসেও ফিরোজের শংকা কাটে না। হঠাৎ একদিন দ্বিতীয় মেয়ে সাবরিনাও এসে যোগ দিল একই কাজে। শুধু বললো আমার সাথে সহযোগিতা না করলে সব জানিয়ে দেবে। ফিরোজের ঘাড়ে কয়টি মাথা যে ওদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে। শুরু হলো রুবাইয়া ও সাবরিনার মনরঞ্জন করা। ওরা ফিরোজকে দিয়ে শুধু ওদের সাধই মেটায় না। মার্কেটে গিয়ে ফিরোজের ইচ্ছে মত জিনিস কিনে দিত। ভাল ভাল জুস ও অন্যান্য খাবার খাওয়াত। ফিরোজ নিয়তিকে মেনে নিয়ে ওদের কাছ থেকে শুধু স্বর্নের অলংকার গিফট নিতো। এভাবেই চলতে থাকলো সময়। মালিক ওকে ভীষণ আদর এবং বিশ্বাস করতো। মালিকের বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা বাড়ীতে থাকে। ছোট ছেলেটি ফিরোজের প্রায় ৪/৫ বছরের বড় হবে। ওদের সাথেও ফিরোজের সম্পর্ক চমৎকার। কয়েকদিন হয় ছোট মেয়েটির আচার আচরণেও ফিরোজ আতংকের গন্ধ পেলো। গাড়ীর পিছনে না বসে সামনে এসে বসে। ওর সাথে ইচেছ করেই গা লাগিয়ে চলে। ফিরোজ বুঝেও না বোঝার ভান করে ওকে এড়িয়ে চলতে থাকে। কিন্তু পারে না। একদিন সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে গাড়ীর মধ্যে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়। ফিরোজের বুঝতে বাকি থাকে না। এবার সে কি করবে? মেয়েটি ওকে ভালবাসে। ভালবাসার মানুষকে কেউ ভাগ বসাতে দিতে চায় না। কোন ভাবে যদি জানতে পারে ওর বড় দুই বোনও ওকে নিয়ে খেলা করে তখন কি হবে? ভাবতেই ওর গা শিউরে উঠে। দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। মনে হয় আর কোন দিন দেশে ফিরে যেতে পারবে না। মা বোনদের চেহারা চোখের সামনে ভেষে উঠে। স্বপ্নাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন মরুভুমির বালিকনায় মিশে যায়। কি করবে ফিরোজ? নিয়তি ওকে নিয়ে এ কি খেলা শুরু করেছে। ফিরোজ তখনও জানে না ওর জন্য আরও বিশেষ কিছু অপেক্ষা করে আছে। দেখতে দেখতে এরই মধ্যে ২০টি মাস পার হয়ে গেছে। ফিরোজ প্রচুর টাকা পাঠিয়েছে দেশে। বাবা ধানি জমি কিনেছে। মাটির ঘর ভেঙ্গে টিনের ঘর দিয়েছে। স্বপ্না ফিরোজের ফেরার আশায় বুক বেধে আছে।
রাহাত দ্বিতীয় ছেলেটির নাম। খুবই স্মার্ট। একদিন দুপুর বেলা ফিরোজ চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে শুয়ে আকাশ কুসুম ভাবছিল হঠাৎ চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে ওর ঘরে রাহাত। কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে তুই আমার বোনদের সাথে- আর কিছু বলতে হয়নি। একলাফে খাট থেকে নেমে রাহাতের দু'পা জড়িয়ে ধরে ফিরোজ। দুচোখ দিয়ে দর দর করে নামতে থাকে বর্ষার বন্যা। রাহাত এক হাত দিয়ে ওর চুল মুঠ করে ধরে মুখটি ঘুরিয়ে দেয়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কি মনে করে ওর পরনের কাপড়টি তুলে মুখে ঢুকিয়ে দেয় জিনিসটি। ফিরোজ পাগলের মত ওর সব ইচ্ছে পুরণ করতে লেগে যায়। দাতে দাত চেপে সহ্য করে ওর সব অত্যাচার। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে আমার কোন দোষ নেই। কিন্তু কোন কথাই বলা হয় না। যাবার সময় পকেট থেকে এক বান্ডিল নোট বিছানায় ফেলে বলে- ফিরোজ তোর কোন ভয় নাই। আমি জানি তোর কোন দোষ নেই। তুই আমার বন্ধু।
বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে অনেক কাদলো ফিরোজ। শাওয়ারের পানি আর চোখের পানি একাকার হয়ে মিশে গেল। কেউ বুঝতে পারলোনা ওর মনে অবস্থা। ফিরোজ ভাবলো আর নয়। এবার পালাতে হবে। কিন্তু কি করে। সব কাগজপত্র পাসপোর্ট ওদের হাতে। তাছাড়া পালালে ওরা আবার ওকে ধরে আনবে। তখন বিষয়টি খুব খারাপ হবে। কিন্তু কি করবে? অনেক চিন্তা করে ফিরোজ একটি পথ বের করলো। এর মধ্যে ছোট মেয়েটিও তার কাজ শুরু করে দিয়েছিল। ফিরোজ জানে মালিক ছোট মেয়েটির প্রতি খুবই দূর্বল। ওর কোন কথা ফেলতে পারে না। তাই ওকেই ব্যবহার করতে হবে এখান থেকে মুক্তির পথ হিসাবে। একদিন ফিরোজ নাবিলাকে নিয়ে গেল সেই সমুদ্রের পাড়ে। যেখানে মেয়েটি ওকে প্রথম প্রেম নিবেদন করেছিল। ওকে বুঝিয়ে বললো- আমার মায়ের ভীষণ অসুখ হয়তো বেশীদিন বাচবে না। তাই আমাকে দেখতে চাচ্ছে। তুমি যদি তোমার বাবাকে বলে এক মাসের ছুটি নিয়ে দাও তবে আমি আমার মাকে দেখে আবার তোমার বুকে ফিরে আসবো। তোমাকে অনেক আদর করবো। মেয়েটি ফিরোজের কথায় রাজি হলো। বাবাকে বলে একমাসের ছুটি মঞ্জুর করে খান্ত হলো না। যাওয়া আসার টিকেটও কোম্পানী থেকে দিয়ে দিল।
দেশে যাবার প্রস্তুতি চললো। সবাই ওকে অনেক উপহার কিনে দিল। বিশেষ করে মেয়ে তিনটি। প্রচুর গহনা পেল ফিরোজ। যাবার আগে রাহাত বললো- ফিরোজ আমি তোকে কিছু দিতে চাই, তুই কি পেলে খুশি হবি আমাকে বল। ফিরোজ ভাবল এই সুযোগ- যে টাকার জন্য আজ ওকে দেশ ছাড়াতে হয়েছে, যে টাকার জন্য ওর জীবনটা নষ্ট করতে হয়েছে সেই টাকাই ওর দরকার। ফিরোজ বললো- তোরাতো অনেক যাকাত দিস। অনেক সময় যাকাত দেয়ার লোকই পাস না। কিন্তু আমাদের দেশে একটুকরা কাপড়ের অভাবে মানুষ নামাজ পড়তে পাড়ে না। শীতের দিনে একটুকরো কাপড়রের জন্য ওরা কুকুর বুকে নিয়ে ঘুমায়। আমার দেশে যদি ঐ টাকা দিস তবে তোদের যাকাত সঠিক ভাবে পালন হবে।
রাহাত কয়েকদিন পর অবিশ্বাস্য রকম পরিমান টাকা এনে ফিরোজের হাতে দিল। ফিরোজ অত অর্থ কোন দিন স্বপ্নেও দেখেনি। ফিরোজ এবার সত্যিকারভাবেই রাহাতকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো। টাকাগুলো ওর একাউন্টে জমা দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিল।
দেশে ফেরার সকল প্রস্তুতি শেষ। মালিকও শেষে ওকে আদর করে মাথায় একটি চুমু দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। তোর জন্য সবাই অপেক্ষা করবে। নাবিলা আর রাহাত ওকে এয়াপোর্টে বিদায় জানাতে এলো। শেষ বিদায়ের সময় লক্ষ করলো নাবিলা রুমাল দিয়ে চোখ মুচছে। হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে প্লেনে এসে বললো ফিরোজ।
মধ্য প্রাচ্যের একটি নামকরা এয়ারপোর্ট থেকে এইমাত্র যে প্লেনটি নীল আকাশের বুকে ডানা মেলে বাতাশে ভাসল সেই প্লেনের ভিতর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিট বেল্ট খুলল ফিরোজ। ওর শ্বাস ফেলা দেখে মনে হলো ও যেন কত দিন মুক্ত বাতাশে শ্বাস নিতে পারেনি। পিছনে গা এলিয়ে দিতেই সারা পৃথিবীর ঘুম যেন ওর দুচোখে নেমে এলো। ফিরোজ দুচোখ বন্ধ করল।
ফিরোজকে পেয়ে সারা গ্রাম যেন আনন্দে নেচে উঠলো। আত্মীয় অনাত্মীয় যেই ফিরোজের সাথে দেখা করতে এলো সকলকেই কিছু না কিছু উপহার দিল ফিরোজ। সবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রণ। স্বপ্নার কোলে মাথা রেখে ফিরোজ বলে গেল ওর প্রবাসের ৭৬৫ দিনের ইতিকথা। হঠাৎ ফিরোজ লক্ষ করলো স্বপ্নার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ফিরোজ বার বার মাপ চাইলো জীবন বাচানোর জন্য অনিচ্ছাকৃত ঘটনার জন্য। স্বপ্না কিছুই বললো না। ২ দিন পর একটি চিরকুট পেলো ফিরোজ। তাতে লেখা- ফিরোজ, তুমি আমার ছোট্ট হৃদয়ের ভালবাসা। জ্ঞান হবার পর থেকে তোমাকেই ভালবেসেছি। প্রতিদিন নামাজ পড়ে তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি। তুমি জীবন নিয়ে ফিরে এসেছো আমি খুব খুশি হয়েছি। তবে তোমার সাথে এক ঘরে বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তুমি অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করো। এখন তোমার সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য অনেক মেয়ের বাবাই রাজি হবে। তবে একটি অনুরোধ তুমি তোমার হবু বউকে তোমার অতীত জীবনের কোন কথা বলো না। গোপন ঘটনা গোপনেই রেখ। ওতেই শান্তি। -অভাগী স্বপ্না।
হঠাৎ ঝাকি খেয়ে জেগে উঠলো ফিরোজ। জানালাদিয়ে দেখলো প্লেনটি বাংলাদেশের মাটি ছুয়েছে।
পুনচঃ ফিরোজ স্বপ্নাকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়েছে। ফিরোজের বাবা মারা গেছেন। ফিরোজের আর প্রবাসে ফিরে যাওয়া হয়নি। ফিরোজ স্বপ্নাকে ওর প্রবাস জীবনের কোন কথাই বলেনি। ওরা সুখি, ওদের একটি ফুট ফুটে মেয়ে হয়েছে। ওরা ভাল আছে। পাঠক দোয়া করবেন। পরিচয় গোপন রাখার জন্য ছদ্য নাম ব্যবহার করা হলো।